সাভারকর কীভাবে ‘বীর’ বিশেষণে ভূষিত হলেন?

বিনায়ক দামোদর সাভারকর। বিজেপির হিন্দুত্বের আইডিওলজির জন্মদাতা। বিজেপির বিদ্বেষমূলক, বিভেদমূলক আদর্শের আঁতুড়ঘর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন ভারতের আরেকটি সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণমনা রাজনৈতিক-ধার্মিক দল, হিন্দু মহাসভার দীর্ঘকালের সভাপতি।

আমরা অনেকেই জানি, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সেলুলার জেলে দীর্ঘ দশ বছর তিনি বন্দী ছিলেন, এবং আজ পোর্ট ব্লেয়ারের এয়ারপোর্টটি তাঁরই নামে নামাঙ্কিত। বীর সাভারকর এয়ারপোর্ট। কিন্তু কী রকম বীর ছিলেন তিনি? কত বীরত্বের কাহিনিগাথার জন্ম দিয়েছেন তিনি? আমরা নেতাজীর বীরত্বের কাহিনি পড়েছি, পড়েছি বিনয়-বাদল-দীনেশের গল্প, জেনেছি সর্দার ভগৎ সিংয়ের আত্মবলিদানের কাহিনি, অগ্নিযুগের আরও অসংখ্য বীর বিপ্লবীর বীরত্বের গাথা আমরা পড়ে এসেছি আমাদের স্কুলজীবনের ইতিহাস বইতে, অন্যান্য বইতে। কিন্তু সাভারকরের বীরত্ব?

ফ্রিলান্স জার্নালিস্ট পবন কুলকার্ণি দ্য ওয়্যার পত্রিকায় প্রকাশিত এই নিবন্ধে তারই পর্যালোচনা করেছেন, তাঁর অনুমতিক্রমে আমি বাংলা অনুবাদটি আমার ব্লগে তুলে দিলাম।

modi-savarkar
২০১৫ সালে, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মজয়ন্তীতে তাঁর ছবির সামনে যুক্তকরে সম্মান জ্ঞাপন করছেন। ছবিঃ উইকিমিডিয়া কমন্‌স

বিনায়ক দামোদর সাভারকর (১৮৮৩-১৯৬৬) – ‘বীর সাভারকর’ নামে যিনি পরবর্তীকালে প্রায় কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছেন, তিনি অজস্রবার ক্ষমাভিক্ষার পরিবর্তে জেল থেকে ছাড়া পাবার পরে শুধু যে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন, তাইই নয়, তিনি ইংরেজদের সাথে সক্রিয়ভাবে হাত মিলিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতি নিজের আনুগত্যেরও প্রমাণ রেখেছিলেন।

যে সময়ে সুভাষ চন্দ্র বোস ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করার উদ্দেশ্যে তিলে তিলে গড়ে তুলছেন আজাদ হিন্দ ফৌজ, সেই সময়েই সাভারকর ব্রিটিশের সাথে সহযোগিতা করে লাখ লাখ ভারতীয়কে ব্রিটিশ সেনাবাহিনিতে ভর্তি হতে সাহায্য করছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলেও তিনি তাঁর হিন্দুত্বের অ্যাজেন্ডা দিয়ে আঘাত করেছিলেন, যার ফলে ভারতীয় সমাজে সাম্প্রদায়িক হানাহানি শুরু হয়। অথচ তখন সমস্ত ভারতীয়র একসাথে একজোট হয়ে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়বার কথা ছিল। স্বাধীনতার পরে, সাভারকরের ওপরেও মহাত্মা গান্ধীর হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল।

এই লোকটিকে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বিবৃত করেন “ভারতমাতার খাঁটি সন্তান এবং অসংখ্য দেশবাসীর কাছে অনুপ্রেরণা-স্বরূপ” বলে। ২০১৬ সালের ২৮শে মে, সাভারকরের জন্মজয়ন্তীতে তিনি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এইগুলি লেখেন। ২০১৫তে সাভারকরের ৩২তম জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী এই হিন্দুত্বের আইকনের একটি ছবির সামনে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান “তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং ভারতের ইতিহাসে অমূল্য অবদানের” কথা স্মরণ করে।

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মহাশয়ও পিছিয়ে ছিলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরও টুইট আসে – “আজ, বীর সাভারকরের জন্মদিবসে, আমরা এই মহান স্বাধীনতা-সংগ্রামী এবং সামাজিক তথা রাজনৈতিক দার্শনিককে নতমস্তকে স্মরণ করি এবং আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।” টুইটারে অসংখ্য বিজেপি নেতাদের শ্রদ্ধাবনত টুইটের ভিড়েই দেখা পাওয়া যায় টেলিভিশন অ্যাঙ্কর রাজদীপ সরদেশাইয়ের টুইটও। তাঁর বক্তব্য ছিল, যদিও তিনি সাভারকরের “আদর্শের সাথে একমত নন”, তবুও সাভারকরকে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে তিনি সম্মান জানান।

হ্যাঁ, সাভারকর স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন অবশ্যই, গত শতাব্দীর প্রথম দশকের বেশ কিছু সময় ধরে, তখনও ইনি হিন্দুত্বের আদর্শকে সেইভাবে নিজের ধ্যানজ্ঞান করে ফেলেন নি। সেই সময়ের সাভারকর ছিলেন একজন নাস্তিক, যুক্তিবাদী, যিনি ভারতকে ঔপনিবেশিকতার কব্জা থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে বিপ্লবের রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন, লিখেছিলেনঃ

 “যখনই ভুল শক্তিপ্রয়োগ করে হিংসার মাধ্যমে জাতীয় এবং রাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করা হয়, তার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া হিসেবেই বিপ্লবের জন্ম হয়, অতএব আমাদের উচিত এই আন্দোলনকে সর্বান্তঃকরণে স্বাগত জানানো, কারণ এটাই সত্য এবং সঠিক পথকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার একমাত্র উপায়।”

১৯০৬ সালে ইংলন্ডে আইন পড়তে যাবার সময়ে সাভারকর ফ্রি ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রতিষ্ঠা করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইংলন্ডে পাঠরত ভারতীয় ছাত্রদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত করা। এই সোসাইটির জমায়েতে দেওয়া এক বিখ্যাত ভাষণে তিনি বলেনঃ “অমুক ব্রিটিশ বা তমুক অফিসারের নামে, এই আইন বা ঐ কানুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুযোগ জানিয়ে কোনও লাভ হবে না। আমাদের আন্দোলন কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা আইনের বিরুদ্ধে নয়, বরং নিজেদের আইন নিজেরাই বানাবার অধিকার অর্জনের পক্ষে। সহজ করে বলতে গেলে আমরা চাই সম্পূর্ণ স্বরাজ, স্বায়ত্বশাসন।” যদিও, ব্রিটিশ শাসনের তৈরি করা আইনের মুখোমুখি যখন তাঁর নিজের বিপ্লবী সত্তা এসে দাঁড়াল, দেখা গেল সাভারকর বেমালুম বদলে গিয়ে নিজেই নিজেকে বিবৃত করছেন “ব্রিটিশ শাসকের সবচেয়ে অনুগত এবং কট্টর সমর্থক” এক প্রজায়।

১৯০৯ সালে নাসিকের তৎকালীন কালেক্টর এ এম টি জ্যাকসনকে হত্যা করতে গিয়ে ধরা পড়ে অভিনব ভারত সোসাইটির এক সদস্য। তদন্তে জানা যায়, তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া পিস্তলটি স্বয়ং সাভারকরই জোগাড় করে দিয়েছিলেন। সাভারকর ধরা পড়েন এবং সেই অপরাধে  তাঁকে আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলে ৫০ বছরের কারাবাসের সাজা দিয়ে পাঠানো হয়। সেইখানে বসে তিনি নিজেকে এই ভাষাতেই বিবৃত করেন, যা ওপরে লেখা হল।

savarkar-carousel

‘বীর’ সাভারকর ব্রিটিশের কাছে ক্ষমাভিক্ষা করেছিলেন

জেলের কঠিন জীবনযাপন কাটাবার মাসখানেকের মধ্যেই, ১৯১১ সালে সাভারকর তাঁর প্রথম ক্ষমাভিক্ষা বা মার্সি পিটিশনেরর চিঠিটি লেখেন ইংরেজ সরকারের উদ্দেশ্যে, যেটি সাথে সাথে নাকচ হয়। দ্বিতীয় মার্সি পিটিশন তিনি লিখে পাঠান ১৯১৩ সালে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি তিক্ত অনুযোগ করছেন তাঁর পার্টির অন্যান্য সহবন্দীরা তাঁর থেকে বেশি সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন বলেঃ

“১৯১১ সালের জুন মাসে আমি যখন প্রথম এখানে আসি, আমার পার্টির অন্যান্য অভিযুক্তদের সাথে আমাকে মুখ্য কমিশনারের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে “ডি” ক্লাসের আওতাভুক্ত করা হয় – ডি মানে ডেঞ্জারাস প্রিজনার, কিন্তু আমার সঙ্গের অন্যান্য অভিযুক্তদের ডি ক্লাসের আওতায় ফেলা হয় নি। এর পরে টানা ছ মাস আমাকে একলা নির্জন কারাবাসে বাধ্য করা হয়, আর কাউকে কিন্তু এই সলিটারি কনফাইনমেন্ট দেওয়া হয় নি। যদিও পুরো সময়কাল ধরেই আমার আচরণ অত্যন্ত ভালো ছিল, কিন্তু তবুও সেই ছ মাসের সলিটারি কনফাইনমেন্টের শেষে আমাকে জেল থেকে ছাড়া হয় নি, যদিও আমার সহবন্দীরা ছাড়া পেয়ে গেছিল।

…যারা অল্প মেয়াদের কয়েদী, তাদের কথা আলাদা, কিন্তু স্যার, আমার কপালে তো পঞ্চাশ বছরের সাজা লেখা রয়েছে! নৃশংসতম অপরাধী এখানে যেটুকু সুযোগ সুবিধে পায়, সেটুকুও যদি আমার জন্য বরাদ্দ না হয়, তবে আমি এই সুদীর্ঘ সময় এই বদ্ধ কুঠুরিতে কাটাবার মত মনের জোর কোথা থেকে জোটাতে পারব?”

অতঃপর, ১৯০৬-১৯০৭ সালের ভারতের দিশাহীন অবস্থার বশেই যে তিনি পথ ভুল করে বিপ্লবের পন্থা বেছে নিয়েছিলেন, সে কথা স্বীকার করে তিনি ১৯১৩ সালের ১৪ই নভেম্বরের সেই পিটিশনে ব্রিটিশ সরকারকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি জ্ঞানত সেই পথ পরিবর্তন করেছেন। “সরকার বাহাদুর যদি কৃপাবশত আমাকে ক্ষমা করেন এবং মুক্তি দেন,” তিনি লিখেছেন, “আমি কেবল এবং কেবলমাত্র ব্রিটিশ সরকারবাহাদুরের অনুগত, আজ্ঞাবহ সর্বশ্রেষ্ঠ সমর্থক হয়ে থাকব।”

“এ ছাড়াও”, তাঁর ক্ষমাভিক্ষার চিঠিতে তিনি এমন কিছু অফার করেন যা সেই সময়ের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারত না, “সরকারের বশ্যতাস্বীকার করে আমার মনে যে পরিবর্তন এসেছে, তার বলে আমি একদা ভারতে এবং বিদেশে আমার যারা অনুগামী ছিল, তাদেরকেও আমি ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরিয়ে এনে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারি। আমার সামর্থ্য এবং ক্ষমতায় যতখানি সম্ভব, ততখানি ব্যবহার করে আমি সরকার বাহাদুরের খিদমতগার হয়ে থাকতে চাই, কারণ আমি সজ্ঞানে আমার মধ্যে এই বদল ঘটাচ্ছি। মহামহিম সরকার বাহাদুর যেন দয়া করে আমাকে ক্ষমা করেন, মহামহিম সরকার বাহাদুর ছাড়া আর কে এক দুষ্ট, বিগড়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরিয়ে আনবে তার পিতার ঘরে?” [“my conversion to the constitutional line would bring back all those misled young men in India and abroad who were once looking up to me as their guide. I am ready to serve the Government in any capacity they like, for as my conversion is conscientious..The Mighty alone can afford to be merciful and therefore where else can the prodigal son return but to the paternal doors of the Government?”]

দিন যায়। ৩০শে মার্চ, ১৯২০ সালে তাঁর চতুর্থ মার্সি পিটিশনে সাভারকর লেখেন যে উত্তর দিক থেকে “এশিয়ার রক্তপিপাসু জনজাতির” আক্রমণ ঘটতে পারে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ওপর, যারা আপাতদৃষ্টিতে সরকারের “বন্ধু” সেজে আছে, এবং তিনি নিশ্চিত যে এই সময়ে তাঁর মত “যে কোনও বুদ্ধিমান ভারতপ্রেমিক এই সময়ে প্রাণমন দিয়ে, ভারতের স্বার্থেই ব্রিটিশ সরকারের পাশে এসে দাঁড়াবে এবং সব রকমের সহযোগিতা করবে।”

বারংবার “ব্রিটিশ ডমিনিয়নের হাত তাঁর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার ডালি দিয়ে পূর্ণ করে দেবার প্রতিশ্রুতি” জানাবার পর এই পিটিশনে সাভারকর লেখেন, “এই সুমহান সাম্রাজ্যের মহানতার ছায়ার নিচে আমার হৃদয় তার প্রতি অনুগত, অনুরক্ত হয়ে ওঠে।” “কিন্তু”, এর পরে তিনি লেখেনঃ

“সরকার যদি আরও বেশি করে নিশ্চিত হতে চান আমার এবং আমার ভাইয়ের ব্যাপারে, তবে আমরা সম্পূর্ণভাবে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি আছি যে সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া যে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য সময়সীমা পর্যন্ত আমরা কোনওরকম রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে নিজেদের যুক্ত রাখব না … অথবা অন্য যে কোনও প্রতিশ্রুতি যা সরকার বাহাদুর আমাদের কাছ থেকে লিখিয়ে নিতে চান, যেমন, নির্দিষ্ট একটি রাজ্যের চৌহদ্দির বাইরে কখনও না বেরনো, অথবা মুক্তির পর আমাদের যে কোনওরকম যাতায়াতের সম্পূর্ণ খবরাখবর যে কোনও সময়কাল ধরে নিয়মিত পুলিশের কাছে জানানো – সরকারের ইচ্ছেমত যে কোনওরকম শর্ত, সর্বতোভাবে, আমি ও আমার ভাই, দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার খাতিরে সানন্দে মেনে নিতে রাজি আছি।”

savarkar
সাভারকর। ছবিঃ ইউটিউব

অবশেষে, দশ বছর সেলুলার জেলে কাটাবার পর এবং একাধিক ক্ষমাভিক্ষার চিঠি বা মার্সি পিটিশন লিখে ওঠার পর, সাভারকর এবং তাঁর ভাই, ১৯২১ সালে রত্নগিরির একটি জেলে স্থানান্তরিত হন, এবং রত্নগিরি জেলার বাইরে কখনও পা ফেলবেন না, আর, জীবনে কখনও কোনও রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সাথে নিজেকে যুক্ত করবেন না – এই শর্তে রাজি হবার পর ১৯২৪ সালে অবশেষে তাঁরা মুক্তি পান, দুজনেই। এই নিষেধাজ্ঞার শর্ত তাঁদের ওপর থেকে তোলা হয় ১৯৩৭ সালে।

 

 

এক হেরে যাওয়া মানুষের আত্মপ্রচারের গপ্পো

এখানে তর্ক উঠতেই পারে যে, ১৯২৪ সালে তাঁর এই যে শর্তগুলিতে রাজি হওয়া, এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রতি শর্তহীন ভালোবাসা এবং আনুগত্য দেখানো, সরকারের হয়ে যে কোনও রকম কাজ করতে ইচ্ছুক হওয়া ইত্যাদি; এগুলো মুক্তির জন্য এক ধরণের কূটকৌশল হতেই পারে – শিবাজী যেমন করেছিলেন – শর্তাবলী মেনে জেলের বাইরে গিয়ে আবার তাঁর স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। হ্যাঁ, হতেই পারে, তবে ইতিহাস কিন্তু সাভারকরকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে মনে রাখে নি, মনে রেখেছে শর্ত মেনে চলা এক অনুগত ব্রিটিশসেবক হিসেবেই, যিনি কোনওভাবেই জেলের বাইরে গিয়ে তাঁর ওপর ব্রিটিশ সরকারের আরোপ করা শর্তগুলির একটিও ভাঙেন নি, যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে সেগুলো মেনে চলেছেন। প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়, এহেন সুবাধ্য নাগরিকটি “বীর” উপাধি কেমন করে পেলেন?

জনৈক চিত্রগুপ্তের লেখা লাইফ অফ ব্যারিস্টার সাভারকর নামে একটি বই, সাভারকরের ওপর লেখা প্রথম জীবনীমূলক বই। ১৯২৬ সালে এটি প্রকাশিত হয়। এই বইতে সাভারকরকে এক সাহসী বীর নায়ক হিসেবে দেখানো হয়। এবং সাভারকরের মৃত্যুর দুই দশক পরে, যখন সাভারকরের লেখাপত্রের অফিশিয়াল প্রকাশক বীর সাভারকর ফাউন্ডেশন ১৯৮৭ সালে এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত করে, তখন ফাউন্ডেশনের সম্পাদক রবীন্দ্র রামদাস জানান, বইটির লেখক, “চিত্রগুপ্ত, স্বয়ং সাভারকর ব্যতীত আর কেউ নয়”।

এই আত্মজীবনীতে, থুড়ি, চিত্রগুপ্ত-লিখিত জীবনীতে, সাভারকর পাঠকদের উদ্দেশ্যে জানান যেঃ “সাভারকর আজন্ম এক সাহসী নায়ক, ফলাফলের তোয়াক্কা না করেই তিনি যে কোনও কাজের দায়িত্ব নিয়ে তা সম্পূর্ণ করতে পিছপা হতেন না। সরকারের যে নিয়ম বা আইন তাঁর কাছে সঠিক বা বেঠিকভাবে অন্যায় মনে হত, তৎক্ষণাৎ সেই অশুভ নিয়মকে সমাজের বুক থেকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য তিনি যে কোনও পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা বোধ করতেন না।”

শব্দের খেলা না খেলেই, শালীনতার তোয়াক্কা না করেই সমস্ত সম্ভাব্য বিশেষণসমূহ ব্যবহার করে সাভারকর এই বইতে লিখেছেন যে, সাভারকর “অজস্র চোখে পড়ার মত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন, যেমন, চমকে দেবার মত উপস্থিত বুদ্ধি, অসীম সাহস, অদম্য আত্মবিশ্বাস যা তাঁকে জীবনে অনেক মহান ব্রত সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছিল। তাঁর সাহস এবং উপস্থিত-বুদ্ধির অকুণ্ঠ প্রশংসা না করে থাকা যায় না।”

সাধারণভাবে, ভদ্রসমাজে, একজন প্রাক্তন বিপ্লবী জেল থেকে কোনওমতে ছাড়া পেয়ে যখন ছদ্মনামে ঝুড়ি-ঝুড়ি মিথ্যে কথা লিখে আত্মপ্রচারে রত হয়, তখন অন্যরা ভদ্রজনোজিত কুণ্ঠা ও লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে না। এবং সত্যিই, এমন কারুর পক্ষেই, যিনি আন্দামানের সেই কুখ্যাত জেলে দীর্ঘদিন নরকযন্ত্রণা ভোগ করেন নি, সাভারকরকে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে আবার যুক্ত না হবার জন্য তিরস্কার করা সম্ভব ছিল না।

কিন্তু তাঁর যে আদর্শ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বার বার সাম্প্রদায়িকতার বিভেদরেখার পথ ধরে বারবার বিপথে ঠেলে দিয়েছে, এবং এই আন্দোলনকে শক্ত হাতে দমন করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্রিটিশ সরকারকে তাঁর যে লাগাতার নিঃশর্ত সক্রিয় সাহায্য, দেশের স্বাধীনতার প্রতি এগুলো এক রকমের বিশ্বাসঘাতকতাই, একজন “দেশভক্ত” বা “জাতীয়তাবাদীর” তরফে যা ক্ষমা করা যথেষ্ট কঠিন।

হিন্দুত্বের আদর্শ দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিরোধ

তাঁর সাম্প্রদায়িক মনোভাব যে কালে কালে তাঁর সংকীর্ণ হিন্দুত্বের আদর্শের জন্ম দেবে, তা এক রকমের নিশ্চিতই ছিল – জ্যোতির্ময় শর্মা তাঁর হিন্দুত্বঃ এক্সপ্লোরিং দ্য আইডিয়া অফ হিন্দু ন্যাশনালিজম বইতে লিখেছেন, প্রথম দিকের সাভারকর, অল্পবয়েসের সাভারকরকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে। মাত্র বারো বছর বয়েস তখন সাভারকরের, তিনি ১৮৯৪ সালে বম্বে এবং পুণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর স্কুলের কয়েকজন সহপাঠীকে নেতৃত্ব দিয়ে একটি মসজিদ আক্রমণ করে লণ্ডভণ্ড করেছিলেন। গ্রামের মুসলিম ছেলেদের “ছুরি, পেরেক আর খেঁটো লাঠি” দিয়ে আটকে রেখে সাভারকর আর তাঁর বন্ধুরা এই মসজিদটিতে তাণ্ডব চালান, “মসজিদে উপর্যুপরি পাথর ছোঁড়েন, সমস্ত কাচ আর টাইল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন”। সাভারকর নিজেই এই ঘটনার উল্লেখ করে পরে লিখেছিলেন, “আমরা মসজিদটিকে ধ্বংস করে সেখানে আমাদের বিজয়পতাকা ওড়াই”। দাঙ্গায় যখন হিন্দুদের হাতে মুসলমানদের মরার খবর আসত, বালক সাভারকর এবং তাঁর বন্ধুরা আনন্দে নাচানাচি করতেন।

সাভারকরের সামাজিক এবং রাজনৈতিক চিন্তাধারার মধ্যে তাঁর সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রভাব কেবল যে তাঁর মধ্যে এক গভীর মুসলমান বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছিল, তাইই নয়, ইতিহাসের প্রতি তাঁর দৃষ্টিপাতকেও আবৃত করে রেখেছিল তাঁর সাম্প্রদায়িক দর্শন, যার প্রভাবে তিনি ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে ব্যাখ্যা করেন ব্রিটিশ কর্তৃক ভারতে খ্রিষ্টধর্ম ছড়ানোর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে হিন্দু ও মুসলমানের ধর্মযুদ্ধ। ১৯০৯ সালে, ব্রিটিশ সরকারের অনুগত হয়ে ওঠার অনেক আগে তখন তিনি বিপ্লবী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, সেই সময়ে তাঁর লেখা বই, দ্য ওয়র অফ ইনডিপেন্ডেন্স অফ ১৮৫৭-তে সাভারকর জাস্টিন ম্যাকার্থিকে উদ্ধৃত করে লেখেন, “মোহামেডান (মুসলমান) এবং হিন্দুরা তাদের পুরনো ধর্মীয় শত্রুতা ভুলে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল।”

সেই বইতে তিনি আরও লেখেন, একদা সতী প্রথা আইন করে নিষিদ্ধ করা ব্রিটিশ সরকারকে আটকানো সেই সময়ে দরকার হয়ে উঠেছিল, কারণ, যতই সমাজ সংস্কারের আইন প্রণয়ন করুক না কেন, আসলে ব্রিটিশরা হিন্দুদের সতীপ্রথার পাশাপাশি তাদের পৌত্তলিকতাকেও ঘৃণা করত। সাভারকরের মতে, তারা ভারতে এসেছিল হিন্দু এবং ইসলাম ধর্মকে বিনষ্ট করতে। বইতে তিনি লিখেছেনঃ

“সরকার ইতিমধ্যেই হিন্দু এবং মুসলমান ধর্মের ভিত্তি দুর্বল করে দেবার প্রয়াসে একের পর এক আইন প্রণয়ন করে চলেছে। রেলওয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে, এবং পরিবহন ব্যবস্থা এমনভাবে বানানো হয়েছে যাতে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। বড় বড় মিশনারি স্কুলগুলো সরকারি অনুদান পাচ্ছে, লর্ড ক্যানিং স্বয়ং প্রতিটা মিশনকে হাজার টাকা করে দিয়েছেন, এবং তথ্যাদি থেকে এটা পরিষ্কার যে লর্ড ক্যানিংয়ের মনোগত বাসনা হচ্ছে ভারতে সবাই খ্রিস্টান হয়ে যাক।”

সাভারকরের মতে সিপাহীরা এইসব মিশনের খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু। “যদি কোনও সিপাহী খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয় তাহলে উচ্চৈঃস্বরে তার প্রশংসা করা হয় এবং তাকে সম্মানের চোখে দেখা হয়, তার সেনাবাহিনিতে পদোন্নতি ঘটে, মাইনে বাড়ে, অন্যান্য ধর্মের সিপাহীরা যেখানে ছিল, সেখানেই পড়ে থাকে।”

তিনি লেখেন, “সর্বত্র এই বিশ্বাস দৃঢ় ছিল যে সরকার এই দেশের সনাতন ধর্মসকল ধ্বংস করে খ্রিষ্টধর্মকে এই ভূমির মুখ্য ধর্ম বানিয়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।” নিজের বৈপ্লবিক চেতনার উন্মেষের কেন্দ্রীয় কারণ হিসেবে বার বার ধর্মকে দেখিয়ে, সাভারকর জানাচ্ছেন, তিনি বিপ্লবের উল্লাস অনুভব করতেন প্রতিবার যখন কোথাও একটি চার্চ ধ্বংস হত, একটি ক্রশ ভাঙা হত কিংবা একটি খ্রিষ্টানকে ‘কচুকাটা’ করা হত।

সাম্প্রদায়িকতার কুঁড়ি যদিও তাঁর মননের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই মহীরুহের পরিণতির দিকে বিস্তার হয়ে চলেছে, সে মহীরুহে হিন্দুত্ব আদর্শের বিষাক্ত ফল ফলতে শুরু করে কুড়ির দশকের শেষদিক থেকেই, যখন আন্দামানের কারাবাস তাঁর মন থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে (অথবা খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে, যা তিনি ১৮৫৭ মহাবিদ্রোহের ওপর লেখা বইতে বারে বারে উল্লেখ করেছেন) যুদ্ধের শেষ ইচ্ছেটুকুও মুছে দিচ্ছে। কারাবাসের শেষ কয়েক বছরে সাভারকর, হিন্দুত্বের ধারণার ওপর লিখতে শুরু করেন তাঁর পরের বই, এসেনশিয়াল্‌স অফ হিন্দুত্ব, যা প্রথমে প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে, এবং তার পরে ১৯২৮ সালে পুনর্মুদ্রিত হয় “হিন্দুত্বঃ হু ইজ. আ হিন্দু?” নামে। এই হিন্দুত্বের আদর্শ, যাতে তিনি খুব তাড়াতাড়ি অনুরক্ত হয়ে উঠছিলেন, ছিল প্রকৃত অর্থে বিভেদমূলক এবং এর মধ্যে বিদ্বেষের মূল ফোকাস ব্রিটিশদের থেকে সরিয়ে নিয়ে মুসলিমদের দিকে নিয়ে যাবার সমস্ত মালমশলা মজুদ ছিল।

যদিও তিনি খুব সাবধানতার সাথে ব্যাখ্যা করেন যে, হিন্দুত্ব, অথবা “হিন্দু-নেস” নামক আদর্শ প্রকৃত হিন্দুইজম থেকে সর্বতোভাবে আলাদা, এবং তাঁর আদর্শের এই হিন্দুত্বের অংশীদার ছিল “সনাতনী, সতনামী, শিখ, আর্য, অনার্য, মারাঠা এবং মাদ্রাজী, ব্রাহ্মণ এবং পঞ্চমেরা”, এর সাথেই তিনি তাঁর লেখায় সতর্ক করে দেন, “এটা ভেবে নেওয়া খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, হয় তো আদর্শটাই পুরোপুরি ভেঙে যাবে – যদি আমরা ভেবে বসি মোহামেডানরা (মুসলিমরা) স্রেফ ভারতে বসবাস করছে বলেই তাদেরও হিন্দু বলে ভেবে নেওয়া হবে।”

“মহামেডান আর খ্রিষ্টানদের ধর্মে”, তিনি লিখেছেন, “হিন্দুত্বের সাথে মিলে যায় এমন অনেক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে, কেবল একটি মূল জিনিসের অভাব আছে – এরা ভারতকে তাদের পবিত্র মাতৃভূমি বলে মনে করে না”। সাভারকরের মতে, “ভারতের মত একটি কোহেসিভ নেশন কেবলমাত্র সেই সমস্ত অধিবাসীদের নিয়েই গঠিত হতে পারে, যারা কেবল পূর্বপুরুষের বসবাসের সূত্রেই এখানকার অধিবাসী নন, বরং যারা এই দেশকেই তাদের ঈশ্বরের দেশ বলে মনে করে, তাদের সাধুসন্তের দেশ বলে মনে করে, যাদের পুরাণ উপকথা কেবল এই দেশের মাটিকে ঘিরেই রচিত হয়”। ইঙ্গিত সুস্পষ্ট।

মুসলিমদের ভালোবাসা আর আনুগত্য, তাঁর মতে, “নিঃসন্দেহে তাদের জন্মভূমি আর তাদের পয়গম্বরের জন্মভূমির মধ্যে বিভক্ত। মুসলমানরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের পয়গম্বরের স্মৃতিবিজড়িত দেশকে তাদের জন্মভূমির থেকে বেশি পবিত্র মনে করে, বেশি আনুগত্য দেখায়”। মনে আসতেই পারে যে, এই যুক্তিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মুসলিমদেরও সেই সব দেশের প্রকৃত অধিবাসী বলা না-ই যেতে পারে, কারণ তাদের মূল আনুগত্য তো সর্বদাই সৌদি আরবের প্রতি বজায় থাকবে, যেখানে আছে তাদের পয়গম্বরের স্মৃতিবিজড়িত মক্কা আর মদিনা, সেই সব জায়গাকেই তারা তাদের জন্মভূমির থেকে বেশি সম্মান দেবে – এটা তো যে কোনও দেশের মুসলিমদের ক্ষেত্রেই তো তা হলে প্রযোজ্য, সাভারকরের যুক্তি অনুযায়ী।

সেই উনিশশো কুড়ি সালেই, তাঁর এই সব সাম্প্রদায়িক যুক্তিজাল যে দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের যৌথ প্রচেষ্টাকে ছাড়খার করে দেওয়া যাবে, এটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকারের নজর এড়ায় নি। যদিও এক সময়ে সাভারকর জেল থেকে ছাড়া পান এই শর্তে যে তিনি কখনও রাজনীতিতে অংশ নেবেন না, ব্রিটিশ সরকার কিন্তু রত্নগিরিতে তাঁকে রত্নগিরি মহাসভা আয়োজন করতে ঢালাও অনুমতি দিয়েছিল, সেখানে যে কাজ হত, তাকে আজকের ভাষায় বলা হয় “ঘর ওয়াপসি”। এই মহাসভা আরেকটি কাজ করত – স্থানীয় মসজিদে প্রার্থনার সময়ে লাউডস্পিকারে মিউজিক চালিয়ে দিত জোরে জোরে।

কে বি হেডগেওয়ার নামক এক বীতশ্রদ্ধ কংগ্রেসীর সঙ্গে দেখা করারও অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সাভারকরকে, যিনি, সাভারকরের হিন্দুত্বের আদর্শে প্রচণ্ড উৎসাহিত হয়ে, ভারতকে কীভাবে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা যায়, তাই নিয়ে সাভারকরের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করতে বসেন। আলাপচারিতার কয়েক মাস বাদে, ১৯২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হেডগেওয়ার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস নামে একটি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে ভরপুর সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন, যা সাভারকরের মতই ব্রিটিশ সরকারের একান্ত অনুগত একটি সংস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল।

রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে সার্বিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, শামসুল ইসলাম দেখিয়েছেনঃ “স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ শাসক সাভারকরের এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখেও না দেখার ভান করে গেছিল, কারণ এদের কাজকর্মের মাধ্যমে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভেদ যত বেশিমাত্রায় সৃষ্টি হবে, তার ওপরেই নির্ভর করবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভারতে অস্তিত্ব টিকিয়ে থাকার ভবিষ্যৎ।”

ঔপনিবেশিক সরকারের সাথে সহযোগিতা

১৯৩৭ সালে সাভারকর হিন্দু মহাসভার সভাপতি পদে নির্বাচিত হন, সেই বছরেই রাজ্যভিত্তিক নির্বাচনে (প্রভিন্সিয়াল ইলেকশন) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রথমবার বিপুলভাবে জয়ী হয়, যাকে আমরা আজকাল বলি ল্যান্ডস্লাইড ভিক্ট্রি। এই নির্বাচনে হিন্দু মহাসভা এবং অন্যান্য সাম্প্রদায়িক দলগুলি, যথা মুসলিম লীগ ইত্যাদি – সকলেই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়, এমনকি দেশের মুসলমান অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে পর্যন্ত মুসলিম লীগ তাদের সরকার গড়তে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই জয় জাতীয় কংগ্রেস বেশিদিন ভোগ করতে পারে নি। দু বছর পরেই শুরু হয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, এবং তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো, কংগ্রেস বা অন্যান্য দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলির সাথে কোনও আলোচনাতে না বসেই এক তরফা ভারতকে জার্মানির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির যুদ্ধে অংশীদার হিসেবে ঘোষণা করে দেন, প্রতিবাদে জাতীয় কংগ্রেস ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হবার পর, ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি ঘোষণা করে, তারা ব্রিটেনের এই সংকটকালে ব্রিটেনের পাশে দাঁড়াতে রাজি, কিন্তু পরিবর্তে ব্রিটেনকে ভারতের হাতে স্বাধীনতা সঁপে দিতে হবে, এবং সুযোগ্য লোকেদের দ্বারা কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেমব্লি গঠন করিয়ে স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার ভার দিতে হবে। লিনলিথগো প্রত্যুত্তরে বলেন তিনি বড় জোর ভারতকে ডমিনিয়ন স্টেটাস দিতে পারেন, তার বেশি নয়। অতএব প্রতিবাদস্বরূপ কংগ্রেসের সমস্ত মন্ত্রী একযোগে পদত্যাগ করেন। 

সুবর্ণ সুযোগ হাতের মুঠোয় পেয়ে, পরের মাসেই সাভারকর হিন্দু মহাসভার সভাপতির পদবলে লিনলিথগোর সাথে দেখা করেন। স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠানো এই মিটিংয়ের রিপোর্টে লিনলিথগো লিখেছিলেনঃতিনি (সাভারকর) বললেন, এই পরিস্থিতিতে মহামহিম ব্রিটিশ সরকার দেশের হিন্দুদের দিকে ফিরে দাঁড়াক এবং তাদের সমর্থন পাবার চেষ্টা করুক … আমিও ঠিক সেই রকমই ভাবছিলাম, আমাদের চিন্তাধারা এত বেশি মাত্রায় মিলে গেল, যে আমি বুঝতে পারলাম এই সময়ে হিন্দুইজম এবং গ্রেট ব্রিটেনের পারস্পরিক বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য আমাদের জোর দিতে হবে, পুরনো তিক্ততা শত্রুতা সব ভুলে গিয়ে। সাভারকর আরও জানালেন, হিন্দু মহাসভা স্পষ্টভাবে ডমিনিয়ন স্ট্যাটাসের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানাচ্ছে, এবং যুদ্ধশেষে মহাসভা এর জন্য সর্বতোভাবে দায়িত্ব নেবে।”

দু মাস বাদে, মহাসভার কলকাতা অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সাভারকর বলেন দেশের সমস্ত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় “অতি অবশ্যই যেন যুবকদের সেনাবাহিনিতে যোগ দেবার জন্য উৎসাহ জোগায়, যে কোনওভাবে এবং সবরকমভাবে।” যখন গান্ধীজী পরের বছর ব্যক্তিগত স্তরে সত্যাগ্রহ আরম্ভ করলেন, সেই সময়ে সাভারকর, ১৯৪০ সালের মাদুরাতে এক জনসভায় হিন্দুদের কাছে আহ্বান জানালেন “যত বেশি সংখ্যায় সম্ভব, দলে দলে ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনির বিভিন্ন পদে যোগদান” করতে।

১৯৪১ সালে, বিশ্বযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ব্রিটিশকে শেষ ধাক্কা দেবার উদ্দেশ্যে তখন গড়ে তুলছেন এক সেনাবাহিনি। তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনির থেকে অক্ষশক্তির হাতে ধরা পড়া বন্দী ভারতীয় সৈন্যদের নিচ্ছেন নিজের বাহিনিতে – উদ্দেশ্য, এর পরে জাপানি মিলিটারির সাহায্যে তিনি নিজের বাহিনি নিয়ে ব্রিটিশদের ভারত থেকে উৎখাত করবেন। অন্যদিকে, এই সময়েই, ভাগলপুরে মহাসভার অধিবেশনে সাভারকর তাঁর অনুগামীদের বলছেন, “জেনে রাখা ভালো যে জাপানের এই যুদ্ধে যোগদানের সাথে সাথে আমরা ব্রিটিশের শত্রুদের মুখোমুখি পড়ে গেছি এই মুহূর্ত থেকে … হিন্দু মহাসভার সদস্যরা, অতএব, অতি অবশ্যই হিন্দুদের উদ্বুদ্ধ করে তুলবেন দেশজুড়ে – বিশেষত বাংলা ও আসামের মত রাজ্যগুলিতে, এবং সেখানকার হিন্দুদের যথাসম্ভব উৎসাহিত করবেন আর একটি মিনিটেরও অপচয় না করে অনতিবিলম্বে ব্রিটিশ সেনাবাহিনিতে যোগ দিতে।”

প্রতিদানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনির কম্যান্ডার ইন চীফ “ভারতকে শত্রুশক্তির হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে, হিন্দুদের একত্রিত করে সেনাবাহিনিতে যোগ দেওয়ানোর কাজে সক্রিয় সহযোগিতার জন্য ব্যারিস্টার সাভারকরকে তাঁর আন্তরিক অভিনন্দন” জ্ঞাপন করছেন, শামসুল ইসলাম হিন্দু মহাসভার আর্কাইভ ঘেঁটে এই তথ্য তুলে এনেছেন আমাদের সামনে।

১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে গান্ধীজীর ‘ভারত ছাড়’ অভিযানের উত্তরে সাভারকর হিন্দু মহাসভার সদস্যদের নির্দেশ দেন, “সমস্ত মিউনিসিপ্যালিটির সদস্য, স্থানীয় সংস্থার সদস্য, সাংসদ অথবা যাঁরা সেনাবাহিনিতে রয়েছেন … তাঁরা নিজ নিজ পদে আসীন থাকুন”, পুরো দেশে। তখন জাপান দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ভারতের কাছাকাছি অবস্থিত প্রায় সমস্ত দেশ দখল করে ফেলেছে, সুভাষ বোস জার্মানী থেকে জাপান যাবার প্রস্তুতি চালাচ্ছেন – উদ্দেশ্য, জাপানের অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে তিনি ব্রিটিশদের ওপর আঘাত হানবেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হিসেবে সেই আঘাত তিনি সত্যিই হেনেছিলেন, পরের বছর অক্টোবর মাসে।

এই সময়ে সাভারকর কী করছেন? তিনি শুধু মহাসভার সদস্যদের বিভিন্ন পদে “চেপে বসে থাকা”র পরামর্শ দিচ্ছেন তাইই নয়, তিনি নিজের হাতে “ব্রিটিশ সেনাবাহিনির জন্য হিন্দু যুবকদের রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্পের আয়োজন” করছিলেন, যাতে তারা “উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢুকে পড়া আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যদের কচুকাটা করতে পারে ব্রিটিশ বাহিনির তরফে।” সাভারকর এর পর মাদুরার এক সভায় জানাচ্ছেন, স্রেফ এক বছরে তিনি এক লাখ হিন্দুকে ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনিতে ভর্তি করিয়েছেন, যা সম্ভব হয়েছে হিন্দু মহাসভার সামগ্রিক প্রচেষ্টার ফলে।

যদিও সাভারকর এবং হিন্দু মহাসভার যৌথ সহযোগিতায় পরিপুষ্ট ব্রিটিশ সৈন্য আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যদের শেষমেশ পরাজিত করতে পেরেছিল, কিন্তু গোল বাঁধল লালকেল্লায় তিন আজাদ হিন্দ ফৌজ সেনাপতির বিচার বা পাবলিক ট্রায়াল করতে গিয়ে। ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনিতে অন্তর্ভুক্ত সেই লাখে লাখে ভারতীয় “হিন্দু” সেনার বিবেক জাগ্রত হল, অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ল ব্রিটিশ সেনাবাহিনির সমস্ত স্তরে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটল ১৯৪৬ সালের রাজকীয় ব্রিটিশ নেভিতে নৌ-বিদ্রোহের মাধ্যমে। সম্মিলিত গণরোষের মুখোমুখি হয়ে ব্রিটিশ সরকার তিন সেনানায়ককেই মুক্তি দিতে সম্মত হয়, এবং একই সঙ্গে ইতিহাসের তখন খাতায় লেখা হচ্ছিল ব্রিটিশের ভারত ছেড়ে পাকাপাকি চলে যাবার পরিকল্পনার প্রথম খসড়া।

মুসলিম লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানের প্রস্তাবনা পাস

সাভারকর এবং হিন্দু মহাসভা যে ব্রিটিশদের সাথে নিরন্তর সহযোগিতা করে চলেছিলেন, সেটা বুঝতে খুব বেগ পেতে হয় না, কারণ সবাই জানে সাভারকর ব্রিটিশ নয়, মুসলমানদেরই দেশের মূল শত্রু বলে বিবেচনা করতেন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সবথেকে বেশি বরং যা আমাদের অবাক করে, তা হল হিন্দু মহাসভার সাথে মুসলিম লীগের মিলন।

ভারত ছাড় আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যখন কংগ্রেসের সমস্ত প্রথম সারির নেতারা কারারুদ্ধ, সেই সময়ে হিন্দু মহাসভা সাভারকরের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের সাথে হাত মেলায় এবং সিন্ধ আর বাংলা প্রদেশে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে – যাকে সাভারকর “প্র্যাকটিকাল পলিটিক্স” নাম দিয়ে সমর্থন করেন

মুসলিমরা প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় হিসেবে বিবেচিত হতেই পারে না, কারণ তাদের পবিত্র ভূমি তো এক বিদেশি ভূখণ্ডে – এই মর্মে  গত কয়েক দশক ধরে বিদ্বেষ ছড়ানোর পরেও সাভারকর এবং হিন্দু মহাসভা হাত মেলাল রাজনীতির দোহাই দিয়ে, কারণ দুই সংস্থার মধ্যেই একটা কমন ব্যাপার ছিল। হিন্দু মহাসভা আর মুসলিম লীগ, দুটি পার্টিই কখনও, কোনও রকমভাবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কোনও প্রক্রিয়ায় সক্রিয় বা অন্য কোনও পদ্ধতিতে অংশ নেয় নি। এবং আরও একটি মিল, দুটি পার্টিই সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার ভিত্তিতে গঠিত, যা স্বাধীনতোত্তর ভারতকে অবিভক্ত রাখার পথে প্রধান অন্তরায় ছিল।

এমনকি যখন সিন্ধ বিধানসভা ১৯৪৩ সালে ভারতকে টুকরো করে পাকিস্তান সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে, হিন্দু মহাসভার মন্ত্রীরা তখনও সাভারকরের আপ্তবাক্য অনুসরণ করে কোয়ালিশন সরকারের নিজ নিজ পদে “চেপে বসে” ছিলেন। আশ্চর্য হবার কিছুই নেই, সেদিন থেকে ষোল বছর আগেই সাভারকর এই টু নেশন থিওরির কথা লিখে ফেলেছেন – হিন্দু আর মুসলমানের জন্য দুটি আলাদা দেশ হতে হবে, আর তার জন্য ভারতকে ভাগ করার দাবি জানাতে হবে। সত্যিই যখন ভারত দ্বিখণ্ডিত হল, সাভারকর দোষ দেবার জন্য বেছে নিলেন গান্ধীকে, তিনিই নাকি পাকিস্তানকে ভারত থেকে আলাদা হতে মদত দিয়েছেন। তাঁর এই আকস্মিক দোষারোপ মহাসভা এবং আরএসএসের মধ্যে রাতারাতি অনেক গান্ধীবিদ্বেষীর জন্ম দিল, সে বিদ্বেষের আগুন ছড়িয়ে গেল অনেক অনেক সদস্যের মনে, যারা সাভারকরের অনুগামী ছিলেন; যাদের একজন ছিল সাভারকরের লেফটেন্যান্ট – নাথুরাম গডসে।


পরের পর্বে আমরা আলোচনা করব গান্ধীহত্যায় ‘বীর’ সাভারকরের কী এবং কতখানি ভূমিকা ছিল।

 

 


8 thoughts on “সাভারকর কীভাবে ‘বীর’ বিশেষণে ভূষিত হলেন?

  1. আহা, কি অনুবাদ! মূল নিবন্ধে লেখা আছে, “… Hedgewar founded the RSS, a communal organisation which …”; আর আপনার অনুবাদে সেটা হয়ে গেলো, “… হেডগেওয়ার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস নামে একটি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে ভরপুর সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন …” — ‘সাম্প্রদায়িক সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন’-এর জায়গায় হয়ে গেলো ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে ভরপুর সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন’..অপূর্ব! আর কত overplay করবেন!

    Like

    1. বাঃ, ঠিক জায়গাতেই লেগেছে তা হলে 🙂 ভালো করে মিলিয়ে দেখুন, আরও দু তিন জায়গায় ওভারপ্লে করা আছে। সাভারকর, হেডগেওয়ার আর তাদের আরেসেস-হিন্দুমহাসভার জন্য কোনও প্লে-ই ওভারপ্লে নয়।

      Like

      1. বাহ্! Overplay-এর জবাবে overplay! আপনি-ও তাহলে ওই যারা overplay করে (যেমন সাভারকর, হেডগেওয়ার আর তাদের আরেসেস-হিন্দুমহাসভা) তাদের মতোই হয়ে গেছেন! অবশ্য আপনি বলতেই পারেন, “ওরা খারাপ কাজের জন্য overplay করে, আর আমি ভালো কাজের জন্য করি।” তাতে অবশ্য overplay কোনোভাবেই justified হয় না।

        Like

  2. এক হিংস্র ভারতীয়তা বিদ্বেষীর মূর্খ মূঢ় প্রগলভতা! অচল সিকি তো সময়ের সাথে অবলুপ্ত হয়. তাই অচল মুদ্রা নামকরণই বোধহয় এমন অপোগন্ডের জন্য শ্রেয়। লেখার ছত্রে ছত্রে যেন আপন সনাতন ভারতীয়তার প্রতি ঘৃণা ও খুন ধর্ষণের মরু সভ্যতার প্রতি প্রেম উথলি উঠিছে। যেন আর এক গভীর কুমনের লম্পট নৃশংস বাক্যোচ্চারণের প্রতি মুহূর্তে ফেটে যাওয়া বুদবুদ! লেখকের উপযুক্ত নিবাস স্থল : আইসিস বা তালিবান ঘাঁটি। সাথে প্রচুর যৌনদাসী ও বেহেশতে ৭২ চির উদ্ভিন্ন যৌবনা হুরী মেলার আশ্বাস! ঈনশাল্লাহ!!

    Like

  3. সাভারকর আর এস এস এর জন্য দেশের স্বাধীনতা দীর্ঘ দুই দশক অপেক্ষা করতে হয়। কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তোলে ১৯২৯ এ। হয়ত এসেও যেত কিন্তু এদের জন্য ইংরেজ শাসকরা নিয়ে আসে সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা। তখনই শুরু হয় দাঙ্গা অশান্তি।

    Like

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.